যশোর জেলা গঠনের পটভূমি সম্পর্কে জানতে হলে ফিরে যেতে হবে আরও অতীতে। ১৭৫৭ সালের নবাব সিরাজউদ্দৌল্লার পতনের পর মীর জাফর ক্ষমতা গ্রহণ করেন। মীর জাফর মসনদে বসলেও মূল কলকাঠি নাড়তে থাকেন লর্ড ক্লাইভ। মীর জাফর ছিলেন কলের পুতুল মাত্র। ১৭৬৫ সালের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দিল্লির বাদশাহর কাছ থেকে বাংলা, বিহার ও উড়িশার দেওয়ানি গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমেই মূলত বাংলা শাসনের কর্তৃত্ব পুরোপুরিভাবে বৃটিশদের অধীনে চলে যায়।
শাসনভার গ্রহণের পর থেকেই ব্রিটিশ নৃপতিগণ খাজনা আদায়ে মরিয়া হয়ে ওঠেন। খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য ১৭৭১ সালে তাঁরা সর্বপ্রথম যশোর জেলার মানচিত্র প্রয়ণয়ন করেন। যা আজও যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংরক্ষিত আছে। উক্ত ম্যাপে দেখা যায় বৃহত্তর নদীয়া, চব্বিশ পরগনা, খুলনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর ও পাবনা জেলার বেশির ভাগ যশোর জেলার অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও মানচিত্রটিতে প্রদেশ, সীমানা, জেলা, মহকুমা, থানা, রেললাইন, মহকুমা সদর, নদী, বিল, পাকা রাস্তা, কাঁচা রাস্তা, বন্যাকবলিত এলাকা ইত্যাদি চিহ্নিত করা আছে।
সে সময়ে যশোরের চারটি স্থানে থানা ছিল। ভূষণা, মীর্জা নগর, খুলনার নয়াবাদ এবং কেশবপুরের ধরমপুরে। হেস্টিংস গভর্নর নিযুক্ত হওয়ার পর আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে উক্ত স্থানগুলোতে দেশি দেহরক্ষীর পরিবর্তে বিদেশি সিপাই রাখা শুরু হয়। কিন্তু এই পদ্ধতিতে ব্যয় অনেক বেশি। ব্যবসায়ী মনভাবাপন্ন ব্রিটিশ নৃপতিগণ তাই উক্ত আইন প্রত্যাহার করে। ১৭৮১ সালে গঠন করা হয় নতুন আইন। নতুন আইনে হেঙ্কেলকে একাধারে জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে যশোরে পাঠানো হয়। অর্থাৎ তিনি খাজনা আদায়ের পাশাপাশি একইসাথে প্রশাসনিক ও আইনিব্যবস্থা পরিচালনা করবেন। এভাবেই মুড়লিতে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রথম জেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম।
মূলত ১৭৮১ সালেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যশোরে তাদের অর্থনৈতিক, আইনি এবং প্রশাসনিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এজন্য এ সালটিকেই যশোর জেলার জন্মসাল হিসাবে ধরে নেয়া হয়।
যশোর জেলা গঠনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বিস্তৃতভাবে জানা যাবে শ্রী সতীশচন্দ্র মিত্রের যশোহর-খুলনার ইতিহাস গ্রন্থের নিবন্ধ - 'বৃটিশশাসন ও হেঙ্কেলের কীর্ত্তি' এবং 'যশোর-খুলনা : গঠন ও বিস্তৃতি', হোসেনউদ্দীন হোসেনের 'যশোরাদ্যদেশ' গ্রন্থের 'কোম্পানি আমলের যশোর' এবং J. Westland এর এ রিপোর্ট অন দ্য ডিসট্রিক্ট অব যশোর গ্রন্থের 'The Establishment of British Administration' নিবন্ধে।