ঝিকরগাছায় ১৯৫৪ সালে দুটি রাজনৈতিক সভা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই গৌরবউজ্জল দিনের কথা আমরা জানতে পারি ঝিকরগাছা উপজেলার সাবেক আওয়ামিলীগ সভাপতি ও বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ গোলাম সরওয়ারের 'বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ' শীর্ষক লেখায়। আজ ১৭ মার্চ ২০২৩ বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে লেখাটির নির্বাচিত অংশ প্রকাশ করা হলো। - সম্পাদক।
তাঁর যৌবনে তিনি গ্রাম থেকে গ্রামে, শহর থেকে বন্দরে সারা বাংলার প্রতিটি জায়গায় চারণ রাজনীতিক হিসাবে বাউলের মত ঘুরে ঘুরে বাংলার দুঃখী মানুষের সুখ দুঃখের কথা শুনেছেন আর রাজনৈতিক কর্মী তৈরি করেছেন। পথে প্রান্তরে যেখানে পেরেছেন রাজনৈতিক মিটিং সভা করে জনগণকে রাজনীতি সচেতন করে তোলার প্রয়াস পেয়েছেন। প্রতিপক্ষের প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে সন্তর্পণে অভি কুশলী রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে আওয়ামী লীগের ভিত্তি তৈরি করা হতে পরিপূর্ণ মজবুত সংগঠনের রূপায়ন করতে তাঁকে বার বার জেলে যেতে হয়েছে জীবনের প্রায় আঠারো বছর তাঁকে জেলে থাকতে হয়েছে। তবু তিনি তার কর্ম তৎপরতায় কখনো পিছিয়ে থাকেননি। তিনি এতবড় ধীশক্তি সম্পন্ন সাহসী কর্মবীর ছিলেন যে কোন বাঁধাই তাঁকে শেষ পর্যন্ত নিরস্ত করতে পারেনি। বাঙালি জাগো জাগো বাঙালি। এই কথা বলে তিনি বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে গাড়ি ঘোড়া চলে না। সেখানেও তিনি যে ভাবে হোক পৌঁছে গেছেন। কোথাও বা পায়ে হেঁটে কোথাও বা বাইসাইকেলে অথবা নৌকায়।
১৯৫৩ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরের বছর ১৯৫৪ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি শহীদ মশিয়ূর রহমানের সাথে ঝিকরগাছা থানার দুই প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাজনৈতিক সভায় যোগদান করেন । স্থান দু'টিকে তাঁর পদধূলি দিয়ে ধন্য করে রেখে গেছেন। একটি মাগুরা ইউনিয়নের কায়েমকোলা বাজার সংলগ্ন মাঠ আর দ্বিতীয় স্থানটি হলো শংকরপুর ইউনিয়নের নায়ড়া হাটখোলা । নায়ড়া হাটখোলার স্মৃতিকে জাগরুক করে রাখার জন্য আজ সেখানে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।
ঝিকরগাছার নায়ড়া হাটখোলায় বঙ্গবন্ধুর শুভাগমন উপলক্ষ্যে স্মৃতিফলক |
আমার আব্বাজান হুজুর মরহুম আলহাজ সিদ্দিক হোসেন দীর্ঘকাকল শংকরপুর ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং অত্যন্ত রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং তাঁরই আহবানে নায়ড়া হাটখোলায় সেই ঐতিহাসিক জনসভা আয়োজিত হয় বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই জনসভায় প্রধান অতিথি। সেই জনসভায় আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম এবং এ জন্য নিজেকে আজও ধন্য মনে করি। সে সময় ঢাকার মিটফোর্ড মেডিক্যাল স্কুলের ছাত্র ছিলাম। সেই সভায় আমিই তাকে পুষ্পমাল্যে ভূষিত করি এবং মানপত্র পাঠ করি। জনগণের পক্ষ হতে মণিয়ূর রহমান কর্তৃক প্রণীত একটি রাজনৈতিক প্রশ্নপত্রও আমি সেদিনে প্রধান অতিথি শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্দেশ্যে পাঠ করে শোনাই। উত্তরে তিনি তার বক্তৃতায় স্বভাব মূলক বাকপটুতার মাধ্যমে দিয়েছিলেন । সামটা-দেউলী বেত্রাবতী নদের উপরে দেওয়া বাশের সাঁকো পার হয়ে শহীদ মশিয়ূর রহমানের সাথে দীর্ঘ ২/৩ মাইল পায়ে হেঁটে শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন নায়ড়া হাটখোলায় সেই জমজমাট সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। এমনি ধরণের ইতিহাস সারা বাংলার গ্রামে গঞ্জে শহরে বন্দরে অজস্র রয়েছে যার প্রতিটি জায়গায় নিজেই সশরীরে শত কষ্ট সহ্য করেও উপস্থিত হয়েছেন।