পূর্ব পাকিস্তান নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টির আগেই যশোরে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। তাতে বলা যায়, বাঙালির হাজার বছরের যে গৌরব ভাষা আন্দোলন, তার আঁতুরঘর যশোর। ১৯৪৭ সালে ১৪ আগস্ট পকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হবে। কিন্তু এই রাষ্ট্রের ভাষা কী হবে তা নিয়ে বুদ্ধিজীবী মহলে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছিলো। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু এ নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছিল কলকাতা থেকে প্রকাশিত 'আজাদ' পত্রিকা। পূর্ব বাংলার একটি স্বার্থান্বেষী মহল উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য তৈলমর্দন' শুরু করেছিল। জুলাই মাসে প্রথম সপ্তাহে আজাদ পত্রিকায় পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু তা নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এসময় প্রথম যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজের ছাত্রী হামিদা রহমান (গুপি) ১০ জুলাই কলকাতা থেকে প্রকাশিত কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র ‘স্বাধীনতা' পত্রিকায় একটি চিঠি লেখেন। 'পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা' শীর্ষক ওই চিঠিতে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা সে বিষয়ে যথেষ্ট যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয় । হামিদা রহমান চিঠিতে লেখেন, 'পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রিয় পত্রিকা 'আজাদের' পৃষ্ঠায় বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষায় পরিণত করার বিরুদ্ধে যুক্তি দেখে খুবই দুঃখ হয়। ... পাকিস্তান জনগণের রাষ্ট্র। তাই তার ভাষা হবে জনগণের ভাষা। বাংলার সাড়ে চার কোটি লোক যে ভাষায় কথা বলে, যে ভাষায় সাহিত্য রচনা করে, যে ভাষায় মনের ভাব ব্যক্ত করে সে ভাষা তাদের নিজস্ব ভাষা হবে না, এও কি বিশ্বাস করতে হবে?' বিচারপতি কেএম সোবহান ১৯৮৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ‘সংবাদে' প্রকাশিত 'একুশের চিন্তা' প্রবন্ধে হামিদা রহমানের এই চিঠি সম্পর্কে লিখেছেন, ‘ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত বলা যায় এখান থেকেই।'
এর আগে ১৯৪৭ সালের ৩ জুন বৃটিশ সরকারের পক্ষে মাউন্ট ব্যাটেন ঘোষণা করেন ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ সালের মধ্যে তারা ভারতের শাসনভার ত্যাগ করবেন। ১৪ আগস্ট নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলো। যার একাংশ পূর্ব পাকিস্তান আরেক অংশ পশ্চিম পাকিস্তান । এই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ভাষা বাংলা। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে করাচি শিক্ষা সম্মেলনে সিলেটের কয়েকজন বুদ্ধিজীবী শিক্ষাবিদ অংশ নেন। তারা পাকিস্তানের ভাষা হবে উর্দু এর পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন বিষয়টি নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান ও কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আবুল মুনসুর আহমেদ, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহসহ আরো কয়েকজন বুদ্ধিজীবী বাংলা ভাষা হবে পূর্ব পকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা এই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করেন।
১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গণপরিষদ অধিবেশনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ঘোষণা করেন, 'পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু।' তাঁর এই ঘোষণায় পুরো দেশ গর্জে ওঠে। যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজের ছাত্র আফসার আহমেদ সিদ্দিকী কলকাতা থেকে প্রকাশিত আবুল হাসিম সম্পাদিত 'সাপ্তাহিক মিল্লাত' ও আবুল মুনসুর আহমেদ সম্পাদিত 'দৈনিক ইত্তেহাদ' পত্রিকায় বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে দু'টি চিঠি লেখেন। তাঁর এই চিঠি প্রকাশের পর সারা দেশ থেকেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে লেখালেখি শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা একই দাবিতে সভা করে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে । এ খবর সংবাদপত্রের মাধ্যমে যশোরে এসে পৌঁছায়। যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজের শিক্ষার্থীরাও বাংলা ভাষার জন্য গর্জে ওঠেন। ফেব্রুয়ারি মাসেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলমগীর সিদ্দিকী, নাজিম উদ্দিন, আফসার আহমেদ সিদ্দিকী, হামিদা রহমান, হায়বাতুল্লাহ জোয়াদ্দারসহ আরো কয়েকজন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সংবাদপত্রে বিবৃতি প্রকাশ করেন। ভূষো কালি দিয়ে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে হাতে লেখা পোষ্টার কলেজ ও আশেপাশের এলাকায় সাটানো হয়। এসময় ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট এক সরকারি আদেশে ছাত্র ফেডারেশনের অফিসসহ আরো কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠনের অফিস সিলগালা করে দেয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে কমিউনিস্ট পার্টি, মুসলিম লীগের একাংশ, ছাত্র ফেডারেশন, সোসালিস্ট রিপাবলিকান পার্টি যৌথভাবে প্রতিবাদ সভা করে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাষা সৈনিক কমরেড আব্দুল হক, হাবিবুর রহমান, শান্তিময় ঘোষ, রঞ্জিত মিত্র, হীরেন সেন, সুবোধ রায়কে পুলিশ বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক করে কারাগারে পাঠায়। ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজের (পুরাতন কলেজ ভবন) এলভি মিটার লেকচার হলে ছাত্র সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আরো সিদ্ধান্ত হয় ২ মার্চ কলেজে ছাত্র ধর্মঘট পালিত হবে। এই সভায় ছাত্রলীগ নেতা আলমগীর সিদ্দিকী, আফসার আহমেদ সিদ্দিকী, ছাত্র ফেডারেশন নেতা হামিদা রহমান, রঞ্জিত মিত্র, সৈয়দ আফজাল হোসেন, সুধীর রায়, হায়বাতুল্লাহ জোয়াদ্দার, নাজিম উদ্দিন বক্তব্য রাখেন । এই সিদ্ধান্তের কথা টিনের তৈরি চোঙ্গার মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জানানো হয় টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে ২ মার্চ কলেজে পূর্ণ ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। এরপর আবার এলভি মিটার হলে বৃহৎ আয়োজনে ছাত্র সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই ছাত্র সভা থেকে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। ভাষা সৈনিক আফসার আহমেদ সিদ্দিকী তাঁর 'ভাষা আন্দোলন: যশোরে সংগ্রাম মুখর দিন' প্রবন্ধে লিখেছেন, 'আলমগীর সিদ্দিকী ও রঞ্জিত মিত্রকে সর্বসম্মতিক্রমে যুগ্ম-আহবায়ক নির্বাচিত করা হয়। পরিষদের সদস্য হিসাবে মনোনিত হন হামিদা সেলিম (হামিদা রহমান), সুধীর কুমার রায়, দেবীপদ চট্টোপাধ্যায়, সৈয়দ আফজাল হোসেন, আফসার সিদ্দিকী, অশোক ঘোষ, সুনীল রায়, হায়বাতুল্লাহ জোয়াদ্দার, কাজী আবদুর রাকিব প্রমুখ। এদিন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে বক্তব্য রাখেন আলমগীর সিদ্দিকী, সৈয়দ আফজাল হোসেন, ছাত্র ফেডারেশনের হামিদা সেলিম, সুধীর কুমার রায় ও রঞ্জিত মিত্র। সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নাজিম উদ্দিন ও হায়বাতুল্লাহ জোয়াদ্দার।
অন্যদিকে, ভাষা সৈনিক হামিদা রহমান তার 'জীবনস্মৃতি' গ্রন্থে লিখেছেন, “আমি তখন থার্ড ইয়ারে পড়ি। আলমগীর সিদ্দিকীও পড়ে। আমি ও আলমগীর সিদ্দিকী যুগ্ম-কনভেনার হিসাবে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলি । আমাদের কমিটির সভাপতি ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি ডা. জীবন রতন ধর । সদস্য ছিলেন উকিল হাবিবুর রহমান, উকিল মসিউর রহমান, অনন্ত মিত্র, জালাল আহমেদ, আফজাল হোসেন প্রমুখ ব্যক্তিরা।
সংগ্রাম পরিষদ জোরে সোরে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। আন্দোলনকে আরো বেগবান করার লক্ষ্যে সংগ্রাম পরিষদে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে যুক্ত করা হয়। এদের মধ্যে ছিলেন কংগ্রেস নেতা ডা. জীবন রতন ধর, আওয়ামী লীগ নেতা তরুণ আইনজীবী মশিয়ূর রহমান, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা অনন্ত মিত্র, মুসলিম লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুল খালেক প্রমুখ। এই নেতৃবৃন্দ সংগ্রাম পরিষদকে আন্দোলন বেগবান করার জন্য নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।
২ মার্চ ছাত্র ধর্মঘটের পর প্রায় প্রতিদিনই ছাত্ররা শহরে মিছিল করেছে। ঢাকার রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ সারা পূর্ববঙ্গে ছাত্র ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ঢাকা থেকে কিছু পোষ্টার ও হ্যান্ডবিল যশোরের নেতৃবৃন্দের কাছে পাঠানো হয়। ১১ মার্চ ধর্মঘটের কর্মসূচির খবর দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকায় ছাপা হয়। যশোরের ছাত্র জনতা ১১ মার্চ ধর্মঘট সফল করার জন্য সভা সমাবেশ মিছিলসহ ব্যাপক তৎপরতা চালাতে থাকে। কিন্তু ১০ মার্চ যশোরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইএ নোমানী শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে সভা, সমাবেশ, মিছিল, পিকেটিং নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। সরকারি মাইকে তার এই ঘোষণা প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এদিন বিকেল চারটায় কোতোয়ালি থানার উত্তর পাশে সোসালিষ্ট রিপাবলিকান পার্টি অফিসে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ জরুরী সভা করে। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ডা. জীবন রতন ধর। বক্তব্য রাখেন মশিয়ূর রহমান, আব্দুল খালেক, কমরেড অনন্ত মিত্র। সভায় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। তারা সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু ছাত্ররা ছিলো অটল। তারা সাফ জানিয়ে দেয়-১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ধর্মঘট পালন করা হবে। ছাত্রদের এই সিদ্ধান্তকে হটকারি দাবি করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সভা ছেড়ে চলে যান। পরে ছাত্ররা সিদ্ধান্ত নেয় যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে সকাল ১০টায় মিছিল বের করা হবে। মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ছাত্র ধর্মঘটে অংশগ্রহণের জন্য আহবান জানাবে।
একুশে ফেব্রুয়ারির পরদিন যশোর শহরের সার্কিট হাউজের সামনে (বর্তমান মুজিব সড়ক) পুটে সরদারের বাড়ির গেটের কাছে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এই মিনারটি ছিল ইট দিয়ে তৈরি একটি স্তম্ভ। এখানেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
১১ মার্চ বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করে রাজপথে নেমে আসে। কিন্তু পিটিআই, যশোর জিলা স্কুল ও মোমিন গার্লস স্কুলের শিক্ষার্থীরা ছাত্র ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করতে চাইলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তানরা বাধা দিয়েছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আরো বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সকালে মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এক পর্যায়ে মিছিলটি মোমিন গার্লস স্কুলে আসে। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন আলমগীর সিদ্দিকী, আফসার আহম্মেদ সিদ্দিকী, সৈয়দ আফজাল হোসেন, হামিদা রহমান। মোমিন গার্লস স্কুলে লেখাপড়া করতো ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট ইএ নোমানীর মেয়ে। সে শিক্ষার্থীদের ধর্মঘটে যোগ দিতে বাধা দিয়েছিল। হামিদা রহমান বীরদর্পে স্কুলে ঢুকে নোমানীর মেয়েকে সিঁড়ির উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। তার ঠোঁট কেটে রক্ত ঝরে পড়ে। এমনকি একটি দাঁতও ভেঙ্গে যায়। এ ঘটনায় স্কুলের মেয়েরা করতালি বাজিয়ে মিছিলে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। এরপর মিছিল ষষ্ঠীতলা পাড়ার পিটিআই স্কুলে এসে পৌঁছায়। এখানকার প্রধান শিক্ষক বাধা দিলেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস বাদ দিয়ে মিছিলে অংশ নেয়। যশোর জিলা স্কুলের ছাত্ররাও একইভাবে মিছিলে যোগ দেয়। এক্ষেত্রে ওই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থী খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । জিলা স্কুল থেকে মিছিল উকিল বারের সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে আইনজীবীরা রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই বলে শ্লোগান দিতে থাকে। আওয়ামী লীগ নেতা তরুণ আইনজীবী মশিয়ূর রহমান উকিল বার থেকে মিছিলে এসে যোগ দেন। এক মাইল দীর্ঘ এই মিছিলটি যশোরের একটি ঐতিহাসিক মিছিলে পরিণত হয়। মিছিলটি ট্রেডিং ব্যাংক (বর্তমান টিএন্ডটি অফিস) মাঠে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ছাত্র- জনতার এক বিরাট সমাবেশে। অ্যাডভোকেট মসিয়ূর রহমানের সভাপতিত্বে এই সমাবেশ বক্তব্য রাখেন আলমগীর সিদ্দিকী, হামিদা রহমান, রঞ্জিত মিত্র, সৈয়দ আফজাল হোসেন, এসএমএইচ জিন্নাহ। নেতৃবৃন্দ বাংলা ভাষার স্বীকৃতির জন্য আন্দোলন অব্যাহত রাখার শপথ নেন। তারা পুলিশ ও প্রশাসনকে নির্যাতন-নিপীড়নের পথ পরিহারের আহবান জানান। কিন্তু সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে গণগ্রেপ্তার শুরু করে এখান থেকে অ্যাডভোকেট মসিয়ূর রহমান, রঞ্জিত মিত্র, এসএমএইচ জিন্নাহ, কাজী আবদুর রাকিব, রবি কুমার সাহা, পবিত্র কুমার ধর, অনন্ত মিত্র, হাবিবুর রহমান, লুৎফর রহমান, আফজাল আহম্মেদ সিদ্দিকী, আব্দুর রাজ্জাক, গোলাম মোর্ত্তজা, সৈয়দ আফজাল হোসেনকে আটক করা হয়। এরপর পুলিশ শহর থেকে আরো ৩০/৪০ জন ছাত্র-জনতাকে আটক করে। আটকের খবর পেয়ে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা আদালতের সামনে আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরবর্তিতে যশোর শহর থেকে আরো ২০/২৫ জনকে আটক করা হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সব নেতাকর্মীর নামে প্রশাসন হুলিয়া জারি করে। অতিদ্রুত আটককৃতদের যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিন রাতে যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু পুলিশের ধড়পাকড় আর হুলিয়া থাকার কারণে সংগ্রাম পরিষদের বেশির ভাগ নেতৃবৃন্দ এই সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। সন্ধ্যা সাতটার পর অনুষ্ঠিত সভায় বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের নেতারা ভয়ে উপস্থিত হননি। তবে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ডা. জীবন রতন ধর ও যুগ্ম-আহবায়ক হামিদা রহমান, আফসার আহম্মেদ সিদ্দিকীসহ আরো কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। হামিদা রহমান তাঁর 'জীবনস্মৃতি' গ্রন্থে লিখেছেন, 'কলেজের বেয়ারা কেশবচন্দ্র মিটিং করার বিষয়ে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে কলেজের সব দরজা জানালা বন্ধ করে কলেজকে একেবারে অন্ধকার করে দিয়েছিল। উপরের ঘরে একটিমাত্র মোমবাতি জ্বালিয়ে সেদিন আমরা খুব তাড়াতাড়ি মিটিংয়ের কাজ শেষ করি। হুলিয়া নিয়ে নেতারা যেন গা ঢাকা দেয় সেদিনের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হোস্টেল থেকে কেশব একটা পাজামা, একটা শার্ট ও একটি গামছা এনে দিয়েছিল আমাকে। আমি শাড়ী বদলে পাজামা ও শার্ট পড়ে মাথায় গামছা বেঁধে একটা বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে কলেজের পিছনের দরজা দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম। ওই পোষাকে কেউ আমাকে সেদিন চিনতে পারেনি। এ রাস্তা ও রাস্তা অলিগলি হয়ে বাড়িতে রাত আটটায় গিয়ে পৌঁছালাম। ইতিমধ্যে অন্য ছেলেরা বাড়িতে এসে মাকে খবর দিয়ে গিয়েছে আমি যেন বাড়িতে রাতে না ঘুমায়, কেননা আমার নামে হুলিয়া আছে। মায়ের আদেশক্রমে সেই রাতে আমি পাশের বাড়িতে ঘুমাই। রাতে পুলিশ এসে যখন বাড়ি ঘেরাও করে এবং আমাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য বাড়ির জিনিসপত্র তছনছ করে তখন মা ও ছোট ভাই বোনেরা বেশ ভয় পেয়ে যায়। এদিন আমার দাদী নূরু বিবি ঝাঁটা দিয়ে পুলিশকে তাড়া করেছিলেন।
১৯৪৮ সালের ১৫ মার্চ কোলকাতা থেকে প্রকাশিত 'যুগান্তর' পত্রিকায় ভাষার দাবিতে মিছিলে গুলি বর্ষণের খবর। |
এ সময় পূর্ব বঙ্গের আইন পরিষদের অধিবেশন চলছিল। যশোরের নেতৃবৃন্দ আইন পরিষদের সদস্য খান বাহাদুর লুৎফর রহমানকে যশোরের ১১ মার্চের ঘটনা জানিয়ে টেলিগ্রাম করেন। তাকে জানানো হয় বিষয়টি যেন পরিষদের অধিবেশনে উত্থাপন করা হয় একই সাথে আটককৃতদের মুক্তির দাবি জানানোর অনুরোধ করা হয়। পাশাপাশি ১২ মার্চ ছাত্র ধর্মঘট ও ১৩ মার্চ যশোর শহরে হরতালের ডাক দেয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ছাত্ররা হাতে লেখা পোষ্টার শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। টাঙ্গিয়ে দেয় । ১২ মার্চ পূর্ণ ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয় ধর্মঘটকালীন সময়ে খবর আসে জেলখানায় আটককৃতদের উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাদের খাবার দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়নি কাপড়-চোপড়, প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যশোরবাসী নানা ধরনের শুকনো খাবার, কাপড়- চোপড়, ওষুধপত্র, বিড়ি-সিগারেট, লেপ-তোষক সংগ্রাম পরিষদের কাছে জমা দেয়। পরবর্তীতে এসব দ্রব্য আটককৃতদের জন্য জেলখানায় পাঠানো হয়।
১৩ মার্চ হরতাল সফল করার জন্য শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি যশোরের সব শ্রেণি পেশার মানুষ রাজপথে নেমে আসে। সকাল ১০টায় যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এই মিছিলে সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণের পাশাপাশি সরকারি কর্মচারীরাও যোগ দেন। মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ করে চৌরাস্তা থেকে ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় যশোর কালেক্টরেট ভবনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করলে দড়াটানায় পুলিশ বাঁধা দেয়। যশোর কোতোয়ালী থানার ওসি আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে পুলিশ মিছিলের উপর হামলা চালায়। বেধড়ক লাঠিচার্জ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কিন্তু সংগ্রামী ছাত্র-জনতা একত্রিত হয়ে পুলিশের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পুলিশের উপর ইট-পাটকেল ছোড়ে। ছাত্রদের সহযোগিতার জন্য রিকসাওয়ালা, শ্রমিক, দোকানদাররা এগিয়ে আসে। তারাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র- জনতা ডা. জীবন রতন ধর, আলমগীর সিদ্দিকী, আফসার আহম্মেদ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কালেক্টরেট ভবনে ঢুকে জানালা, দরজা ভাঙচুর করে। ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট ইএ নোমানীর অফিসেও হামলা চালায়। ছাত্রদের ইটের আঘাতে আহত হন ওসি আব্দুল জব্বার। কোতয়ালি থানার দারোগা ফামউদ্দিনের মাথা ফেটে যায়। ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। পুলিশ ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানো শুরু করে। গুলিতে সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহবায়ক আলমগীর সিদ্দিকী আহত হন। তাঁর পায়ে গুলি লাগে। ১৩ মার্চ পুলিশের গুলি চালানোর এই ঘটনাটি ভাষা আন্দোলনকারীদের ওপর প্রথম গুলি বর্ষণের ঘটনা। এই গুলি বর্ষণের ঘটনায় পুরো যশোর শহর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অন্যদিকে পুলিশও বেপরোয়া হয়ে নির্যাতন চালানো শুরু করে। বিশেষ করে অবাঙালি পুলিশরা ছাত্র-জনতার উপর হামলে পড়ে। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেককে আটক করা হয়। রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে মিছিল থেকে পুলিশ কয়েকজন ছাত্রীকে আটক করে। ওই অফিসের কর্মচারীরা অফিস থেকে বের হয়ে এসে পুলিশের হাত থেকে ছাত্রীদের রক্ষা করে চিত্রা সিনেমা হলের কাছে ভাষা সৈনিক একরামুল হককে পুলিশ আটক করে। তাকে বেধড়ক লাঠিপেটা করে রক্তাক্ত করে দেয়। এসময় একজন দুধওয়ালা একরামুল হককে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেন। তিনি দুধ ফেলে সিকেরাক দিয়ে পুলিশকে বেধড়ক পিটিয়ে একরামুল হককে ছাড়িয়ে নেন। ছাত্রদের পুলিশী নির্যাতন থেকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসে শহরের ঝাঁলাইপট্টি পতিতা পল্লীর মেয়েরা। তারা ইট ভেঙে টুকরো ইট ছাত্রদের হাতে তুলে দেয়। এছাড়া নিজেদের ঘরে ছাত্রদের লুকিয়ে রাখে। ৪০ জন ছাত্রকে পতিতা পল্লীর মধ্যে লুকিয়ে রেখে যৌনকর্মীরা তালা এঁটে দেয়। এর ফলে ওই ছাত্ররা পুলিশী নিপীড়ন থেকে রক্ষা পায়। পুলিশী আক্রমনের ফলে মিছিলে অংশ নেওয়া কয়েকজন ছাত্রীর শাড়ী খুলে যায়। ওই যৌনকর্মীরা তাদের শাড়ী দিয়ে ছাত্রীদের সম্ভ্রম রক্ষা করে। পোষ্ট অফিসের সামনে থেকে সুফিয়া নামের একটি মেয়েকে পুলিশ আটক করে। হামিদা রহমানের আরেক সহপাঠী মাইকেল মধুসূদন কলেজের ছাত্রী রুবিকে তাঁর বাড়িতে অন্তরীণ করে রাখা হয়। পুরো শহরে পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় চালায়। পুলিশের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্য ছাত্ররা দড়াটানার তাজ হোটেল ও চৌরাস্তার সালাম রেস্টুরেন্টে গিয়ে আশ্রয় নেয়। কিন্তু অবাঙালি এই দুই হোটেলের মালিক তাদের কর্মচারী দিয়ে আশ্রয় নেওয়া শিক্ষার্থীদের মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় । এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ ওই হোটেল দু'টি বয়কট করার আহ্বান জানান। এই আহ্বানে যশোরবাসী সাড়া দেয়। পরবর্তীতে দুই বছর ওই হোটেল দু'টিতে কোন বাঙালি খাবার খেতে যায়নি।
১৩ মার্চের হরতাল আর পুলিশের প্রথম গুলি বর্ষনের ঘটনার সব বিষয় যশোরের আইন পরিষদের সদস্য খান বাহাদুর লুৎফর রহমানকে জনানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হায়বাতুল্লাহ জোয়াদ্দারকে ঢাকায় গিয়ে লুৎফর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত করে পুরো ঘটনা জানানোর দায়িত্ব দেয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় বাসে উঠার আগমুহূর্তে পুলিশ তাকে তাড়া করে। পালাতে গিয়ে তাঁর পা ভেঙে যায়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ পূর্ববঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিনকে ঘটনা জানিয়ে টেলিগ্রাম করেন। ঘটনার প্রতিবাদে পরের দিন ১৪ মার্চ ফের যশোর শহরে হরতাল পালিত হয়। এরপর মিছিল সমাবেশ হরতাল অব্যাহত থাকে । ১৮ মার্চ যশোরে রাজবন্দি মুক্তি দিবস পালিত হয়। আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে ছাত্র জনতা বিরাট মিছিল বের করে। এসময় সহস্রাধিক অবাঙালি ছোরা, তরবারি, সাইকেলের চেইন, টেংরি, কুড়ালসহ মারাত্মক সব ধারালো অস্ত্র নিয়ে মিছিলের উপর হামলা করে। দোকানপাট লুট করে নেয়। পুরো ঘটনা ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট ইএ নোমানীর সামনে ঘটলেও তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। এই অবাঙালিরা কৌশলে হিন্দু, মুসলমান দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। গুজব রটানো হয় রেলস্টেশনে দু'জন অবাঙালিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন মুসলিম লীগ নেতা অবাঙ্গালিদের পেছনে থেকে ইন্ধন যোগায়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ বিষয়টি বুঝতে পেরে দাঙ্গা বিরোধী এক বিরাট মিছিল বের করে। হাজার হাজার মানুষ এই মিছিলে অংশ নেয়। তারা অবাঙালিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে । তখন তারা শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। অবাঙালিদের বিতাড়িত করার পর সংগ্রাম পরিষদ পাড়া মহল্লায় দাঙ্গা বিরোধী কমিটি গঠন করে। এই কমিটির নেতৃবৃন্দ রাত জেগে পাহারা দিয়ে অবাঙালিদের (বিহারী) দাঙ্গা প্রচেষ্টা ধূলিসাৎ করে দেয়। জেলা প্রশাসন বিকেল থেকে সকাল পর্যন্ত কারফিউ জারি করে। শহরে বেলুচ রেজিমেন্ট নামানো হয়। এ বিষয়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ২০ মার্চ 'আনন্দবাজার' পত্রিকায় খবর ছাপা হয়, 'ভাষা আন্দোলনে যাদেরকে আটক করা হয়েছিল তাদের মধ্যে শ্রী অনন্ত কুমার মিত্র ছাড়া সবাইকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ছাত্ররা জেল গেটে উপস্থিত হয়ে মুক্তিপ্রাপ্তদেরকে নিয়ে মিছিল করে টাউন হল মাঠে আসে। এখানে ছাত্র জনতা বিজয় উল্লাস করে। এরপর ১১ মার্চ ও ১৮ মার্চের যশোরের আন্দোলন সম্পর্কে মূখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন আইন সভায় একটি বিবৃতি দিয়ে যশোরের পুলিশের নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি এ ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দেন। এ ঘটনার পর রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর উন নবী চৌধুরী যশোরে এসে সরেজমিন তদন্ত করেন। কিন্তু সেই তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। যশোরের রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ঢাকা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের চাপে ১১ মার্চ, ১২ মার্চ ও ১৩ মার্চের ঘটনায় আটককৃতদের মুক্তি দেয়। পরবর্তীতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে যশোরের ছাত্র জনতা রাজপথেই সরব থাকে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়ে কেন্দ্রের সব কর্মসূচি পালন করে সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতসহ ভাষা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে মায়ের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদার আসনে বসান । একুশে ফেব্রুয়ারির পরদিন যশোর শহরের সার্কিট হাউজের সামনে (বর্তমান মুজিব সড়ক) পুটে সরদারের বাড়ির গেটের কাছে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এই মিনারটি ছিল ইট দিয়ে তৈরি একটি স্তম্ভ। এখানেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
কবি ও সাংবাদিক ফখরে আলমের লেখা 'যশোরের ভাষা আন্দোলন' গ্রন্থ থেকে সংকলিত