বিখ্যাত মার্কিন গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের শিরোনামে স্থান পেয়েছিল ঝিকরগাছা মুক্তির গল্প। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তাদের প্রকাশিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি বিশেষ সংখ্যায় লেখাটি প্রকাশ হয়েছিল। শিরোনাম ছিল 'A Village Ablaze, a Blown Bridge; Enraptured Jessore Greets Troops' বাংলায় 'একটি জ্বলন্ত গ্রাম, একটি উড়ে যাওয়া সেতু; মুগ্ধ যশোরবাসীর সৈন্যদের অভিবাদন'। দুই কলামজুড়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ছিল মূলত ৫ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের প্রতিনিধির ডাইরিতে লেখা দিনলিপি। প্রতিনিধিটি মিত্রবাহিনী ও পাকবাহিনীর মধ্যকর যুদ্ধ কাভার করছিলেন। 'মুক্তির উচ্ছ্বাস : ঝিকরগাছা দিবস ২০২২' উপলক্ষ্যে প্রতিবেদনটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করা হলো।
যাত্রাপথে প্রায় কোনও যুবতীকে দেখা গেলো না। তার একট বড় কারণ তারা পাকিস্তানি যৌন বর্বরতার বস্তু ছিল। এছাড়া অনেকেই লুকিয়ে অথবা শরণার্থী শিবিরে আছেন। তারা দ্রুতই ফিরে আসবেন।
এদিকের গ্রামাঞ্চল যুদ্ধ দ্বারা খারাপভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়নি। শুধু যেখানে নির্দিষ্ট যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সেটুকু ছাড়া। সেখানেও ধ্বংসাবশেষ বেশিক্ষণ থাকলো না। গ্রামবাসীরা পাকিস্তানি বাঙ্কারগুলো খুলে ফেলে বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী — কাঠের বিম এবং ঢেউতোলা ধাতব পাত সহ অন্যান্য জিনিস লুট করছিল। এমনকি তারা হঠাৎ আগুনে পোড়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গাড়ি গুলোও খুলে ফেলছিল। পরবর্তী বর্ষা অবশিষ্ট সকল দাগকে ঝাপসা করে দেবে। মুছে দেবে সব ধ্বংসাবশেষ। সব কিছু হয়ে উঠবে স্বাভাবিক।
পথে দেখলাম মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের স্কোয়াড মিছিল অথবা সাইকেল নিয়ে রাস্তায় নামছে। তাদের সকলের মুখই ভার এবং গম্ভীর। সম্মুখ সমরে তাদের খুব বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে না বটে। কিন্তু মূলত তারাই পাকিস্তানি সৈন্যদের হয়রানি ও নিরাশ করেছিল। তারা তাদের মর্যাদা বা মনোবল স্খলন না করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।