যশোর বেনাপোল রোডে প্রতিদিন বাসে যাতায়াত করে কয়েক হাজার মানুষ। অতীতের জরাজীর্ণ রোড এখন হয়েছে প্রশস্ত ও আধুনিক। এপথে চলাচল করে কয়েকশো আধুনিক প্রযুক্তি ও কোচের গাড়ি। কিন্তু কেমন ছিল এপথে বাস চলাচল শুরু দিকের বাসগুলো? চলুন জেনে নিই।
শুরু হলো বাস সেবা
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে আগে শুধু যশোরেই নয় সারা বাংলাদেশে যাত্রীবাহী বাস খুব একটা চলাচল করতো না। যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল রেল ও জলপথ। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর মিত্রবাহিনী এদেশ ছাড়ার পূর্বে যুদ্ধে তাদের ব্যবহৃত মালামাল পরিবহনের ট্রাক এবং জীপ গাড়ি গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি করে দেয়। এগুলো কিনে নেন সেই সময়ের বিত্তশালীরা। এরপর সেই গাড়িগুলো বাসের আদলে তৈরি করে যাত্রী পরিবহন কাজে ব্যবহার করা শুরু হয়। সেই সময় থেকেই যশোর রোডেও চলাচল শুরু করে বিশেষ এই বাস। যা যশোর থেকে বঁনগা এবং পরবর্তীতে যশোর থেকে বেনাপোল অবধি যাতায়াত করতো।
যেমন ছিল বাসের আঙ্গিক
এখনকার মতো অত্যাধুনিক ও আরামদায়ক ছিল না সেই সময়ের বাসের কোচ। বডি ছিল কাঠের ফ্রেমে তৈরি। কাঠের বডির উপরে মেরে নেয়া হয়ো পাতলা টিনের শিট। ভেতরে প্রথমেই থাকতো ড্রাইভারের কেবিন। এই কেবিনে থাকতো দুইটা সিট। আর পেছনে আড়াআড়ি কাঠের বেঞ্চ। যা মোটেও আরামদায়ক ছিল না। সর্বপরি একটি বাসে যাওয়া যেত ২০-২৫জন। জানলা গুলো ফাঁকা থাকায় বৃষ্টি এলেই পড়তে হতো বিড়াম্বনায়।
ইঞ্জিন স্টার্ট
এই বাসগুলোর ইঞ্জিন থাকতো সামনে। মজার ব্যাপার হলো এখনকার মতো চাবি দিয়ে ইঞ্জিন স্টার্ট দেওয়ার সুযোগ ছিল না তখন। ইঞ্জিনের সামনে লোহার একটি বিশেষ হ্যান্ডেলের মাধ্যমে স্টার্ট দিতে হতো গাড়ি।
যশোর-বেনাপোল বাস সার্ভিস
দ্বিতীর মহাযুদ্ধের পর থেকেই যশোর-বেনাপোল রুটে এই বাসগুলো চলাচল করতো। যশোর রেলস্টেশন এলাকার পাশে পুরাতন বেনাপোল বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে আসতো বাসগুলো। প্রতি একঘণ্টা পরপর একটি করে বাস কাউন্টার ছেড়ে যেত। ইতিহাসবিদ ও কথাসাহিত্যিক হোসেনউদ্দীন হোসেন জানান, ১৯৫৫ সালের দিকে যশোর থেকে ঝিকরগাছা'র ভাড়া ছিল ২আনা।
তথ্যচিত্র ও সিনেমায় যশোর রোডের বাস
তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত 'চিত্রানদীর পাড়ে' সিনেমার শেষ দৃশ্যে দেখা যায় যশোর-বেনাপোল রোডের বাস চলাচলের চিত্র। এছাড়া মুক্তযুদ্ধকালীন বিদেশি গণমাধ্যমে প্রচারিত ডকুমেন্টারিতেও এই রুটে চলাচলকারী বিশেষ ধরণের এই বাসগুলো দেখা যায়।