ঝিকরগাছার বিজ্ঞান মেলায় এক আতিকেরই ১৩ প্রজেক্ট!


ঝিকরগাছার বিজ্ঞান মেলায় অনিয়ম

সর্বস্তরে বিজ্ঞান অনুরাগ ও বিজ্ঞান সচেতনতা সৃজন এবং শিশু কিশোর ও তরুণদের উদ্ভাবনী কাজে আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ পালন করা হয়ে থাকে। এ আয়োজনের অর্থায়ন করে থাকে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর।

প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ঝিকরগাছা উপজেলায় পালিত হয়েছে ৪৪তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ ও ৭ম বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ২০২২। যেখানে অংশগ্রহণ করে উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন স্কুল। দুইদিনব্যাপী এ আয়োজনে ছিল উপস্থিত বক্তৃতা ও বিজ্ঞান প্রোজেক্ট প্রদর্শনী।

অনিয়ম ও শঠতার আশ্রয়
অভিযোগ আছে ঝিকরগাছা'র বিজ্ঞান মেলাকে ঘিরে বছরের পর বছর চলছে অনিয়ম ও প্রতারণা। যার সাথে যুক্ত খোদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের নিজেদের উদ্ভাবিত প্রোজেক্ট বা তত্ত্ব উপস্থাপন করার শর্ত থাকলেও অধিকাংশ প্রোজেক্টই তারা তৈরি করে ইউটিউব বা ইন্টারনেট থেকে হুবহু নকল করে। এখানেই শেষ নয়। ঝিকরগাছাডটকমে'র কাছে থাকা তথ্য আরও ভয়াবহ। শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবনের বদলে বাইরের লোকের কাছ থেকে তা টাকার বিনিময়ে কিনে নেয়। আর একাজে আর্থিক ও অন্যান্য সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা করে খোদ স্কুল কর্তৃপক্ষ।

এক আতিকের ১৩ প্রোজেক্ট
এবছর ঝিকরগাছার বিজ্ঞান মেলাকে ঘিরে রমরমা ব্যবসা করেছে আতিক নামে ঝিকরগাছা বাজারের এক ইলেকট্রিশিয়ান। মেলাতে তার একার প্রোজেক্টই প্রদর্শিত হয়েছে ১৩টি। যার ভেতর দুইটি পেয়েছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেরার স্থান। অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন, একজন ইলেকট্রিশিয়ান যে কিনা কোনো স্কুলের শিক্ষার্থী নয়, তিনি কীভাবে মেলায় অংশগ্রহণ করলেন? অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনটাই ঘটেছে। ঝিকরগাছা বদরুদ্দীন মুসলিম হাইস্কুলের (বি.এম) ৪টি, ঝিকরগাছা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের ৬টি এবং ঝিকরগাছা সরকারি বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালের (এম,এল) ৩টি প্রজেক্ট আতিক নিজেই তৈরি করে দিয়েছেন টাকার বিনিময়ে। যা উপস্থাপন করে বি.এম হাইস্কুল দ্বিতীয় ও এম.এল হাইস্কুল অর্জন করেছে তৃতীয় সেরার পুরস্কার। এছাড়া তিনি একাধিক স্কুলের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন ব্যস্ততার কারণে।


ইলেকট্রিশিয়ান মো. আতিক। ছবি : সংগৃহীত

প্রতি ভিজিট ৫০০
ইলেকট্রিশিয়ান আতিক প্রজেক্ট তৈরির মালামাল খরচ বাদে প্রতিবার স্কুল ভিজিটের জন্য উপরোক্ত স্কুল গুলোর কাছ থেকে পেয়েছেন ৫০০টাকা। মেলা শুরুর আগের পাঁচদিনে প্রোজেক্ট তৈরি করা বাবদ (মালামাল খরচ বাদে) স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে দিয়েছেন ২৫০০টাকা। এভাবে তিনটি স্কুলে কাজ করেছেন তিনি এবছর।

থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়
এই প্রতিবেদকের সাথে মেলায় ঘুরতে আসা বেশ কয়েকজন দর্শনার্থীর সাথে কথা হয়। তাদের অভিযোগ প্রতি বছরই তারা ঘুরেফিরে একই প্রোজেক্ট দেখে আসছেন। নেই নতুনত্ব বা উদ্ভাবনের কোনো ছাপ। ঠিক যেন ওল্ড ওয়াইন ইন নিউ বোটল। এছাড়া এসব প্রোজেক্ট মডেল হিসাবে কার্যকর হলেও অধিকাংশই বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব। ভিন্ন উদাহরণ যে নেই তা নয়। অনেক শিক্ষার্থীই নিজে নিজে প্রোজেক্ট তৈরি করেন। সেসংখ্যা নিতান্তই কম।



নেই উদ্ভাবনের পরিবেশ
মেলাতে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা জানালেন তাদের বিদ্যালয়ে নেই উদ্ভাবন বা নতুনত্ব নিয়ে কাজ করার যথার্থ পরিবেশ। স্কুলের পড়ার চাপে তারা বাইরের কিছু ভাবতে সময় পায় না। এছাড়া মেলার আগ মূহুর্তে তাদেরকে তড়িঘড়ি করে প্রোজেক্ট তৈরি করতে হয় বলে তারা অনিয়ম ও দূর্ণীতির পথ বেঁছে নেন। যাতে উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতা দেন খোদ শিক্ষকরা।



শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবন বা আবিষ্কারের প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্য প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে সরকার এসবের আয়োজন করলেও তা কোনোই কাজে আসছে না। বরং শিক্ষার্থীরা শর্টকাট ও অনৈতিক কর্ম চর্চার সাথে যুক্ত থাকছে। যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে স্কুলের শিক্ষকরাই। ফলে ব্যহত হচ্ছে আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

ট্যাগ সমূহ

ঝিকরগাছার ইতিহাস, ঝিকরগাছা উপজেলার ইউনিয়ন, ঝিকরগাছা খবর, গদখালি ঝিকরগাছা, ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান, ঝিকরগাছা পোস্ট কোড, ঝিকরগাছা এমপি, ঝিকরগাছা আবহাওয়া, ঝিকরগাছা উপজেলা ম্যাপ, ঝিকগাছার ঐতিহ্য, পানিসারা, ঝিকরগাছা পৌরসভা, ঝিকরগাছা দর্শনীয় স্থান, ঝিকরগাছা বাজার।